রাতারগুল – সাদাপাথর ভোলাগঞ্জ । সিলেট I Travel Blog I 2024

জাফলং

ISHTIAK AHMED

RATARGUL I BHOLAGONJ I SYLHET I ISHTIAK AHMED I BANGLADESH I 2024

 

Point of view: Sylhet  [বিস্তারিত]

🔰(যেখানে, যখন, যেভাবে)

লকডাইনে আটকে থেকে থেকে ঘুরুঞ্চিমনা এই মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত প্রায়। আর তাই যখন খানিক সুযোগ পেলাম, কাবঝাঁফ ছাড়াই প্লান করে ফেললাম সিলেট ট্রিপের। তথাকথিত নিউ নরমাল জামানা শুরু হই হই ভাব থাকলেও তখনো শুরু হয় নাই। তাই খানিকটা সীমিত পরিসরে, কঠোর নিরাপত্তা মেনে সাজিয়ে ফেললাম ঘুরুঞ্চিদের জন্য ফাস্ট ট্যুর প্লান। অনেকেই যেতে চাইলেও করোনা কালিন সময়ের কথা চিন্তা করেন সীমিত পরিসরে রাখলাম দলের জনসংখ্যা। সর্ব মোট আমরা ৮ জন। বাহন ১০ জন ইজিলি উবাইতে সক্ষম এসি হাইএস। যথারীতি কামলা সমাজ আমরা ২৭।০৮।২০২০ রাতে চেপে বসলাম গাড়িতে। রাত ১১ টায় যাত্রা শুরু হলো পুরান ঢাকার নয়াবাজার হতে। একে একে, বাসাবো, কুড়িল হয়ে সকল কামলা তুলে ছুটতে শুরু করলাম সিলেট পানে। 

২৮।০৮।২০২০

ভোর প্রায় ৫টায় পৌছে গেলাম আমরা সিলেটে। অন্যকোথাও ঘুরাঘুরি না করে চলে গেলাম সরাসরি আমাদের পূর্বনির্ধারিত হোটেল ব্রিটানিয়ায়। এখানে এসি ডাবল বেডের রুম গুলো অপেক্ষা করছিল আমাদের জন্য। ফ্রেস হয়ে নিলাম। আর নিয়েই বেড়িয়ে পড়লাম উদ্দেশ্য পানসী। কারন, যাবার আগে খাবার পালা। ভরপুর খেয়ে দেয়ে পথ ধরলাম রাতারগুলের। যদিও আমাদের ভাইব্রাদারের অন্য আরো অনেক গ্রুপ ছিল সেইদিন অধিকাংশই ফাস্টে ছুটেছিল ভোলাগঞ্জ কিন্তু আমরা গেলাম রাতারগুল। কারন একটাই কমনসেন্স। রাতারগুলে তো আর ভিজাভিজির ব্যাপার নাই যা আছে তা সাদাপাথরেই 😜 আর এদিকে নিজের সাথে গাড়ি থাকায় সময় নিয়েও কোন প্যারা নাই। লাইফ প্যারাময়। তাই প্রথমেই রাতারগুল। যাইহোক আমাদের পঙ্খীরাজে চড়ে ৮ঃ৩০ এর মধ্যেই আমরা চৌরাঙ্গি ঘাটে। বাঙালি একটা গুন আছে আর তা হলো তারা যদি কখনো সুযোগ পায়, তবে কখনোই তা হাতছাড়া করে না। আর তাই ৩০০-৪০০ টাকা নৌকাও বেশি মানুষ দেখে নতুন ধান্দা। এক দাম তাদের ৭৫০ টাকা,  এবং ৫ জনের বেশি এক নৌকায় উঠতেও পাবেন না। 🙄 তাও নৌকা যদি পাওয়া যায় তবেই তো। বহু দিন পর তিনদিনের ছুটি। তাই সারাদেশের মানুষ যেন এসে জমেছিল সিলেটে সেই সময়। তাই ব্যাপক নৌকা সংকট। যাইহোক ইধার উধার করে, ছিনতাই – ডাকাতি করেই একপ্রকার পেলাম আমাদের প্রয়োজনীয় ২টা নৌকা। এবার, সোয়াম্প ফরেস্ট বা মিঠা পানির জলারবন রাতারগুলে (Ratargul Swamp Forest) সৌন্দর্য গেলার পালা। এটি সিলেট জেলা শহর থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরে গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত। রাতারগুল বনটি প্রায় ৩০,৩২৫ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। এই বিস্তৃর্ণ এলাকার ৫০৪ একর জায়গায় রয়েছে বন আর বাকি জায়গা ছোট বড় জলাশয়ে পূর্ণ। তবে বর্ষায় পুরো এলাকাটিকেই দেখতে একই রকম মনে হয়। রাতারগুল ‘সিলেটের সুন্দরবন’ নামে খ্যাত। এই রাতারগুল জলাবন বছরে চার থেকে পাঁচ মাস পানির নিচে তলিয়ে থাকা। তখন জলে ডুবে থাকা বনের গাছগুলো দেখতে সমগ্র বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যটকরা এসে ভিড় জমায়। অনেক পর্যটক রাতারগুলকে বাংলাদেশের আমাজন বলেও ডাকেন। বর্ষায় গাছের ডালে দেখা মিলে নানান প্রজাতির পাখি আবার তখন কিছু বন্যপ্রাণীও আশ্রয় নেয় গাছের ডালে। এছাড়াও শীতকালে এখানকার জলাশয়ে বসে হাজারো অতিথি পাখির মেলা। সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবর (বর্ষার শেষের দিকে) পর্যন্ত রাতারগুল ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ বন বিভাগ রাতারগুল বনের ৫০৪ একর জায়গাকে বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করে। আমাদের Ratargul Swamp Forest ট্রিপটা দেখে নিতে পারেন। ভয়ংকর সুন্দর এক জায়গা রাতারগুল। ফিলটা নিতে হবে ভেতর থেকে। তবেই আপনি অনুভব করতে পারবেন। এর নিস্তব্ধতা, এর সৌন্দর্য টা।

Point of view – Sylhet । EP: 01

রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট 

রাতারগুল ঘুরে ফিরেই যখন আমরা আবার গাড়িতে চড়ে বসলাম তখন প্রায় ১২ টা পার। আবারো ছুটে চলা। ওহ ভাল কথা, সিলেটের সীমান্তবর্তী একটি নদের নাম ধলাই। ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে নেমে এসেছে এটি। ধলাই নদের উৎসমুখে পাঁচ একর জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে সাদা সাদা পাথর। ওপারে উঁচু পাহাড়ে ঘেরা সবুজের মায়াজাল। সেখান থেকে নেমে আসা ঝরনার অশান্ত শীতল পানির অস্থির বেগে বয়ে চলা। গন্তব্য তৃষ্ণার্ত ধলাইয়ের বুক। স্বচ্ছ নীল জল, সাদা পাথর আর পাহাড়ের সবুজ মিলেমিশে যেন একাকার। ঠিকই ধরে ফেলেছেন বলছিলাম ভোলাগঞ্জ সাদা পাথরের কথা।

দেশবাসী ঘুরে ঘুরে ঘোরাঘুরি করতে করতেই চলে এসেছি আমরা সিলেটে। এবার পালা সিলেট শহর ছেরে ৩৩ কিলোমিটার দুরের কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জে যাবার। ভোলাগঞ্জ পৌছে প্রথমেই সেরে নিলাম দুপুরের লাঞ্চ। এর পর নৌকা ধরার পালা। এখানে আবার এক সিস্টেমে চলে। নৌকা সব সিরিয়ালে। ভাড়া ৮০০ টাকা, নৌকায় প্রায় ১০-১১ জন ওঠা যায় সহজেই। খেয়ে দেয়ে ড্রেস চেঞ্জ করেই চড়ে বসলাম নৌকায়। গন্তব্য সাদাপাথর। 

এই সাদাপাথরের ভোলাগঞ্জ কিন্তু বিখ্যাত আরেকটি কারনে আর তা হলো রোপওয়ে। ভারতের খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড় থেকে নেমে আসা ধলাই নদীর সাথে প্রতিবছর বর্ষাকালে নেমে আসে প্রচুর পাথর। ধলাই নদীর তলদেশেও রয়েছে পাথরের বিপুল মজুদ। এই পাথর দিয়ে পঞ্চাশ বছর চালানো যাবে- এই হিসাব ধরে ১৯৬৪-১৯৬৯ সাল পর্যন্ত সময়কালে সোয়া দুই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে প্রকল্প। বৃটিশ রোপওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানী প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে। প্রকল্পের আওতায় ভোলাগঞ্জ থেকে ছাতক পর্যন্ত সোয়া ১১ মাইল দীর্ঘ রোপওয়ের জন্য নির্মাণ করা হয় ১২০টি টাওয়ার এক্সক্যাভেশন প্লান্ট। মধ্যখানে চারটি সাব স্টেশন। দু’প্রান্তে ডিজেল চালিত দুটি ইলেকটৃক পাওয়ার হাউস, ভোলাগঞ্জে রেলওয়ে কলোনী , স্কুল,মসজিদ ও রেস্ট হাউস নির্মাণও প্রকল্পের আওতাভুক্ত ছিল। এক্সক্যাভেশন প্লান্টের সাহায্যে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাথর উত্তোলন করা হলেও বর্তমানে এ পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। সংশি­ষ্টরা জানান, পর্যাপ্ত লোকবলের অভাব, পাথরের অপর্যাপ্ততা ও বিকল ইঞ্জিনের কারণে দীর্ঘ প্রায় ১২ বছর ধরে  রোপওয়ে বন্ধ রয়েছে। 

আর হ্যা, এই ভোলাগঞ্জেই কিন্তু রয়েছে ল্যান্ড পোর্ট। ভারতের সাথে আর এই ভোলাগঞ্জ পোর্ট দিয়ে মূলত চুনাপাথর আমদানি করা হয় ভারত থেকে।

ভোলাগঞ্জ যাবার সবচেয়ে ভাল সময় হচ্ছে বর্ষাকাল ও তার পরবর্তী কিছু মাস অর্থাৎ জুন থেকে সেপ্টেম্বর এই সময় যাওয়ার জন্যে সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। অন্যসময় গেলে সেখানে পাথরের সৌন্দর্য দেখতে পেলেও নদীতে বা ছড়ায় পানির পরিমাণ কম থাকবে। আর শীতকালে সাদা পাথর এলাকায় নৌকা চলাচল করার মত পানি থাকেনা তখন পায়ে হেঁটে ঘুরে দেখতে হবে।

সিলেট থেকে ভোলাগঞ্জের দূরত্ব প্রায় ৩৩ কিলোমিটার। দেশের যেখান থেকেই ভোলাগঞ্জ যেতে চান আপনাকে প্রথমে সিলেট শহরে আসতে হবে। সিলেট থেকে বাস, সিএনজি, লেগুনা বা প্রাইভেট কারে করে যাওয়া যায় ভোলাগঞ্জ। বর্তমানে ভোলাগঞ্জ যাওয়ার রাস্তার অবস্থা অনেকটা ভাল।

বর্তমানে ভোলাগঞ্জ যাওয়া অনেক সহজ, যারা একায় বা ছোট গ্রুপে আসতে চান তাদের জন্য আছে ট্যুরিস্ট বাস সার্ভিস। প্রতিদিন সকাল ৭ টা হতে শুরু করে ১ ঘন্টা অন্তর অন্তর বাস ছাড়ে সিলেটের আম্বারখানা,  মজুমদারি হতে ভোলাগঞ্জের উদ্দেশ্যে। ভাড়া নন এসি ৭০-৮০ টাকা। এসি ১০০ টাকা। কিংবা সিএনজি বা লেগুনা ভাড়া করেও চলে আসতে পারেন। সৃষ্টিকর্তার নিজ হাতে সৃষ্ট, অসাধারণ সুন্দর ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর দেখতে। যাইহোক, নিজেদের কথা বলি। পাহাড়ে প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় নদে ব্যাপক পানি। আর তাই যে পানিতে দাপাদাপির প্লান ছিল আমাদের তা অনেকাংশেই মাঠে মারা। কারন নিরাপত্তা সবার আগে। যাইহোক অসাধারণ এক বিকেল কাটিয়েছিলাম ভোলাগঞ্জ সাদাপাথরে, কেমন ছিল সেই দিনটি দেখতে পারেন।

Point of view -Sylhet । EP: 02

ভোলাগঞ্জ – সাদাপাথর ও রোপওয়ে 

ঘুরে ফিরে সন্ধ্যায় ফিরলাম হোটেলে। ব্যাপক জার্নি সাথে ব্যাপক ঘুরাঘুরি তাই ব্যাপক টায়ার্ড সবাই। ফ্রেস হয়ে চলে গেলাম হযরত শাহজালাল রঃ এর মাজারে। তারপর পেট ঠান্ডা করার পালা। এই যাত্রাতে আবারো গেলাম পানসীতে। তারপর রাতে রুমে ফিরেই কি হলো কেউ কইতে পাইনা 😂 ক্লান্তির চোটে ঘুম। আর সেই সাথে সিলেটে প্রথম দিনের সমাপ্তি। 

২৯।০৮।২০২০

সকালে উঠিতে উঠিতে ৮ঃ৩০ পার প্রায়। ফ্রেশ ট্রেশ হয়েই নেমে পড়লাম নিচে। হোটেলের কমপ্লিমেন্টারি ব্রেকফাস্ট আছে বলে। তাই করেই বেরিয়ে পরলাম। ফাস্টে লামাবাজার টুকটাক শপিং টপিং বলে কিছু আছে বলে তাই জন্য। তারপর ছুট জৈন্তাপুর উপজেলার পথে। পথেই মাঝে মধ্যেই বৃষ্টি এসে ভিজিয়ে দিতছিল প্রকৃতি কে। সে এক অসাধারণ রুপ। 

জাফলং তো অনেকেই অনেক বার গিয়েছি। এখন নতুন কোনো উপলক্ষ হলে মন্দ কি ? আর তাই জাফলং যাবার পথেই জৈন্তাপুরের গুচ্ছগ্রামে নেমে পড়েছিলাম আমরা চরম ন্যাচারাল বিউটি গিলতে। চা বাগান ঘেরা টিলা, সামনেই নদী। নদী পার হলেই মেঘালয়ের পাহাড়। আর পাহাড় জুড়ে ঝর্ণা। এর যে কি রুপ মুখে বলে বোঝানো সম্ভব না। একটি পুরো দিন কাটিয়ে দেয়া সম্ভব ন্যাচারাল বিউটি গিলতে গিলতেই। যারা টুকটাক ফুটেজ দেখে দুধের স্বাদ ঘোলে ফিটায়ে চান তারা দেখতে পারেন। 

Point of view – Sylhet ।  EP: 03

জৈন্তাহিল ও মায়াবী ঝর্না 

অসাধারণ কিছু সময় সেখানে কাটিয়েই আমরা আবারো পথ ধরি জাফলং এর। দেশের অন্যতম পর্যটন স্পট জাফলংয়ের পাশেই অচেনা এক জায়গা অতি সম্প্রতি নজরে এসেছে পর্যটকদের। জায়গাটার নাম ‘সংগ্রামপুঞ্জি’। মায়াবী ঝর্ণা আর সবুজ প্রকৃতির জন্য এরই মধ্যে ভ্রমণপিপাসুদের কাছে এটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এবার তাহলে সংগ্রামপুঞ্জি যেতে হয় ?  কি বলেন। 

জিরো পয়েন্ট থেকেই মূলত দেখা যায় সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা। শুকনো মৌসুমে হেঁটেই তপ্ত বালু পার হয়ে আপনাকে পৌঁছাতে হবে সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা। আর বর্ষায় ঝামেলা নেই সরাসরি নৌকাতেই নদীপার হয়ে চলে যেতে পারবেন। কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায় আর তা হলো আমাদের বাটপারি মনো ভাব। নৌকা নিয়েও আছে বড়সড় সিন্ডিকেট। ফাঁদে পা দেবেন না। চরম দামাদামি করে নিবেন বর্ষায় নৌকা নিতে। এই মায়াবী ঝর্ণার কাছে গিয়ে নিজের চোখে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না এখানকার সৌন্দর্য।

ভারতের সীমান্তে অবস্থিত এ মায়াবী ঝর্ণাটিতে জাফলং জিরো পয়েন্ট থেকে যেতে মাত্র ১৫ থেকে ২০ মিনিট সময় লাগে। বিএসএফের প্রহরায় বাংলাদেশীরা সংগ্রামপুঞ্জির মায়াবী ঝর্ণা (Songrampunji Mayabi Waterfall) দেখতে যেতে পারে। পাহাড়ের গা বেয়ে ঝরনার জল জমে পুকুরের মতো সৃষ্টি হয়েছে। এই ঝর্ণার রয়েছে মোট তিনটি ধাপ। ভ্রমণ পাগল মানুষদের জন্য আদর্শ অ্যাডভেঞ্চারের জায়গা এই সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণার। ঝর্ণার তৃতীয় ধাপে রয়েছে একটি সুড়ঙ্গ, আর সুড়ঙ্গ পথের শেষ এখন পর্যন্ত অজানা। পিচ্ছিল পাথুরে পথ পেরিয়ে ঝর্ণার সবগুলো ধাপ দেখতে চাইলে অবশ্যই সাহস এবং বাড়তি সতর্কতা জরুরী। এই মায়াবী ঝর্নাতে ভেজা লোভ সামলানো দায়। ভয় নেই আছে লকার বক্স ৫০ টাকায় মত ভাড়া নেয়। আর তাতেই আপনার সকল কিছু রেখেই নেমে পরতে পারেন ঝর্নাতে। তবে ঝর্নায় উঠতে গেলে সাবধান। পায়ে ভাল গ্রিপের স্যান্ডেল না থাকলে ঝর্ণায় চড়া উচিত নয়। সেই সাথে পাহাড়ে বৃষ্টি হলে প্রচুর পরিমাণে পানি, প্রচুর বেগে কিন্তু নেমে আসে ঝর্না হতে। সো সাধু সাবধান।  যাইহোক এই মায়াবী ঝর্নার মায়া কাটাতে কাটাতেই দিনের শেষ প্রায়। আর দিনের শেষের সাথে সাথে শেষ আমাদের ঘুরুঞ্চিদের সিলেট ট্রিপ। জাফলং থেকে সিলেটে ব্যাক করা। ডিনার টা চরম জঘন্য এক রেস্তোরাঁ পাঁচ ভাইতে করা। হালের ক্রেজ বলে কথা। কিন্ত পাঁচ ভাই রেস্তোরাঁ খাবারের দাম পানসী থেকে অনেক বেশি। পরিমানে অনেক কম, স্বাদও কম আর পরিবেশ ও ভাল নয়। সেই সাথে ভাল নয় তাদের স্টাফদের ব্যবহার। যাইহোক সিলেটের রেস্তোরাঁ সিলেটে মানুষ বুজবে। আমরা দুই দিন কার বৈরাগী ভাত কে অন্ন বলে লাভ কি  বলেন ?  ডিনার শেষে জমপেশ এক মিস্টি পান মুখে পুরেই ধরলাম ফেলার পথ। ভোর হতে হতেই ঢাকায় আমরা। আর সেই সাথেই শেষ হলো ব্যাপক রিল্যাক্স সিলেট ট্রিপ ঘুরুঞ্চিদের।

যাইহোক শেষ হইয়াও হইলো না শেষ, যারা আমাদের মত পশ ট্রিপে না গিয়ে দৌড় ঝাঁফ ট্রিপে যেতে চান তাদের জন্য কিছু তথ্য।

সিলেট যাবেন কিভাবেঃ

ঢাকা থেকে সিলেটগামী যে কোন বাসে চলে আসতে পারেন সিলেট। ঢাকার ফকিরাপুল, গাবতলী, সায়েদাবাদ, মহাখালি ও আবদুল্লাপুর বাস টার্মিনাল থেকে সিলেটের বাস ছেড়ে যায়৷ গ্রীন লাইন, সৌদিয়া, এস আলম, শ্যামলি ও এনা পরিবহনের এসি বাস যাতায়াত করে, এগুলোর ভাড়া সাধারণত ৮০০ থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে। এছাড়াও ঢাকা থেকে সিলেট যেতে শ্যামলী, হানিফ, ইউনিক, এনা পরিবহনের নন এসি বাস জনপ্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা ভাড়ায় পাবেন। সকাল, দুপুর কিংবা রাত সব সময়ই বাস ছেড়ে যায়। ঢাকা থেকে সিলেট এর দূরত্ব ২৪০কিলোমিটার, সিলেট পৌঁছাতে সাধারণত লাগে ৬ ঘন্টার মত। আছে ট্রেন ও, শ্রেণী ভেদে জনপ্রতি ট্রেনে যেতে ভাড়া ২৮০ থেকে ১২০০ টাকা। ট্রেনে সিলেট যেতে সময় লাগে ৭-৮ ঘন্টা। যদি চান তবে, বিমান বাংলাদেশ, ইউএস-বাংলা কিংবা নভোএয়ারের বিমানে চেপেও চলে যেতে পারেন সিলেটে।

সিলেটে থেকে প্রায় সকল প্রকার যানবাহনেই জাফলং যাওয়া যায়, লোকাল বাসে যেতে আপনাকে শহরের শিবগঞ্জে যেতে হবে সেখান থেকে জনপ্রতি ভাড়া লাগে ৮০ টাকা। সিএনজি বা অটোরিকশায় ১২০০ থেকে ২০০০ টাকায় জাফলং যেতে পারবেন। মাইক্রোবাস যাওয়া-আসার জন্য রিজার্ভ নিলে সারাদিনের জন্যে ভাড়া লাগবে ৩০০০ থেকে ৫০০০ টাকা। 

একটা কথা আমি সব সময় বলি আর তা হলো, গুরু নানক বলেছেন, দুগুনা দত্তার চৌগুনা জুজার। মানে তুমি যাই দিবে তার দ্বিগুণ পাবে। একটা দিলে দুইটা পাবে, দুটা দিলে চার টা। ঠিক তেমনি ভাবেই ট্যুরে জান, ট্রাভেলে জান, ট্র‍্যাকিং এ জান। যেখানে মন চায় জান। যেভাবে মন চায় জান। কিন্তু প্রকৃতি ও পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কিছুই করিয়েন না প্লিজ লাগে। নয়তো প্রকৃতি কিন্তু সেই ক্ষতি আমাদের কাছেই ফিরিয়ে দেবে। দ্বিগুণ পরিমাণে ফিরিয়ে দেবে। যাইহোক, ঘুরতে থাকুন, জানতে থাকুন, জানাতে থাকুন। কিপ 🌍 রোমিং
















রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট

ভোলাগঞ্জ – সাদাপাথর ও রোপওয়ে

জৈন্তাহিল ও মায়াবী ঝর্না

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *