RANGAMATI I POLWEL RESORT I Farzana Tabassum I TRAVEL STORY I 2024
RANGAMATI I POLWEL RESORT I Farzana Tabassum I TRAVEL STORY I 2024
রাঙামাটি ট্রিপঃ Polwel resort/ Day 1
রাঙামাটি ঘুরতে যাবার প্ল্যানের প্রধান আকর্ষণ হতে পারত পাহাড়ঘেরা কাপ্তাই লেক। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে তারচেয়ে বড় আকর্ষণ ছিল লোকের (অতিরিক্ত এডিট করে গাঢ় নীল বানানো) ছবি দেখে, বাংলাদেশের মালদ্বীপ শুনে পলওয়েল রিসোর্টে থাকা। অনেক প্ল্যান করে অবশেষে আমার জন্মদিনের দিন না পেলেও তার এক সপ্তাহ পর বুকিং পেয়ে যাই পলওয়েলের। কিন্তু মাত্র এক রাতের। পরের রাতে কোথায় থাকব ফিক্স না করেই ঢাকা থেকে রাঙামাটিগামী শ্যামলী বাসের টিকেট কেটে ফেলি।
১৬০০ টাকা করে টিকেট ছিল ওদের এসি বাসের। আমরা অনলাইনে কাটায় কিছু টাকা এক্সট্রা লেগেছিল।আমরা বাসে উঠি কল্যাণপুর থেকে। রবিবার রাত হওয়ায় ঢাকা ছেড়ে বের হতেই অনেক সময় চলে যায় আমাদের।
বাসে ঘুমোতে পারিনা বলে খুব বোর হচ্ছিলাম। রাত ৩টার দিকে একটা খুবই ফালতু ধরণের হোটেলের সামনে ব্রেক নেয় বাস। হোটেলের নাম মনে করতে পারছিনা কিন্তু বাসের সবাই খুব বিরক্ত হচ্ছিল ওখানে ওদের রেস্টস্টপ বলে। শ্যামলীতে গেলে ওখানেই নামাবে তখন নাম দেখে নিয়েন
সকাল ৭টার দিকে আমরা রাঙামাটি ঢুকি যেখানে ভোর ৫টায় পৌঁছানোর কথা ছিল। ঢাকা থেকে বেরোতে দেরি হওয়ায় এই দুই ঘণ্টা লেইট হয়ে যায়।
সারারাতের না ঘুমানোর ক্লান্তি কমতে শুরু করে বাস যখন একেবেকে চলছিল পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে।
পলওয়েল থেকে বড়জোর ২/৩ মিনিট হাঁটার দূরত্বে বাস নামিয়ে দেয় আমাদের। ওদের চেকইন টাইম সম্ভবত দুপুর ১২ টায় ছিল। প্ল্যান ছিল ততক্ষণে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে রিসোর্ট এক্সপ্লোর করার( আমরা অনেক রিসোর্টেই এমন আগে পৌঁছে গিয়েছি আর রিসেপশনে লাগেজ রেখে ঘুরে বেরিয়েছি)।
ঢুকে রিসেপশনে কথা বলার পর আমাদের রেস্ট নেয়ার জন্য ওরা একটা আন্ডার কন্সট্রাকশনে থাকা বিল্ডিং এ পাঠায়। ওখানে এক রুমে দুইটা করে বেড ফেলা আছে। পাশের একটা হাফ ক্লিন ওয়াশরুমে ফ্রেশ হয়ে একটু রেস্ট নিই আমরা। ১০ টার দিকে বের হই ব্রেকফাস্ট করতে। প্ল্যান ছিল এরপর চুপচাপ ফিশিং পিয়ারে সময় কাটাবার। কিন্তু আমার প্ল্যান একেবারে ভণ্ডুল হয়ে গেল বের হয়ে। চারপাশে হাজার হাজার লোক। লিটারেলি হাজার হাজার। সব শ্রেণী, পেশা, ধর্মের মানুষ ওখানে মনে হচ্ছিল। তখনও আমরা জানতাম না যে, পলওয়েলে যে কেউ চাইলেই মাত্রও ৩০ টাকার টিকেট কেটে রুম ছাড়া বাকি সব কিছুতে access পায়! এমনকি সুইমিং পুলটাও বাইরের দর্শনার্থীদের জন্য ওপেন।
আমাদের যে ঢাকার বাইরে নিজেদের মত চুপচাপ সময় কাটানোর ইচ্ছা ছিল, কাপ্তাই লেকের পাশে রিসোর্টের ঘাটে পা ডুবিয়ে বসে থাকার সখ ছিল সব উড়ে গেল। জায়গাটা মাছ বাজারের মত হয়ে গিয়েছিল প্রচুর লোকের আনাগোনা, বোটের মাঝিদের দামাদামি, ডাকাডাকিতে।
এর মধ্যেই ব্রেকফাস্ট করতে গেলাম আমরা। রুটি,পরোটা, ডিম আর ডাল ছিল। বের হয়ে অনেকের সাথে ধাক্কাধাক্কি করে একটু হেঁটে বেড়ালাম আমরা আর অপেক্ষা করতে থাকলাম ১২টা বাজার। সারা রাতের ক্লান্তির পর এত হইচই খুব বিরক্তিকর লাগছিল। ওদের রিসেপশনের লোকদের মত স্লো আর ইনেফিসিয়েন্ট লোক কম রিসোর্টে দেখেছি আমি। অনেকক্ষণ বসিয়ে রেখে ১২:৪৫ এর দিকে রুমের চাবি দেয় আমাদের।
হানিমুন কটেজ নিয়েছিলাম আমরা। পার নাইট ৬০০০টাকা করে। ততক্ষণে আমার রিগ্রেট হতে শুরু করেছে যে কেন ৩০টাকায় টিকেট কেটে এখানে ঘুরে এই টাকায় একটু শান্ত শুনশান কোথাও উঠলাম না। এর কারণ হচ্ছে পলওয়েলের তেমন কোন রিভিউ চোখে পড়েনি। জানলে কে যেত এখানে একটু নিজেদের মত করে সময় কাটাতে!
রুমের নামটা সুন্দর ছিল। ‘সিলভার কুইন’। রুমের জানালা, বারান্দা থেকে চমৎকার কাপ্তাই লেকের ভিউ পাবেন। রুম থেকেও বাইরের গেস্টদের চিৎকার, চেঁচামেচি, জোরে গান বাজানো সব কানে আসবে বোনাস হিসেবে।
খানিকক্ষণ রেস্ট নিয়ে, শাওয়ার নিয়ে লাঞ্চ করতে যাই ওদের ক্যাফেটেরিয়ায়। তখনও চারপাশে লোকের লাফালাফি, সেলফি তোলা, হাঁ করে তাকিয়ে থাকা চলছে।আমরা অর্ডার করি লেক থেকে ধরা কাচকি মাছ, ব্যাম্বু চিকেন, ডাল আর একটা ভর্তা। বাকি খাবারগুলো ভালো লাগলেও ব্যাম্বু চিকেন একদমই ভালো লাগেনি। পুরোটা মুরগির হাড়গোড়ে বোঝাই আর ফ্লেভারলেস ছিল। উইশ কেউ আগে একটু সতর্ক করে দিত তাহলে এতগুলো টাকা এই ফুডের পেছনে ফেলতাম না!
খাওয়ার পর খানিকক্ষণ রেস্ট নেয়ার চেষ্টা করে বিকেল দেখতে বের হই। ফিশিং পিয়ার আর পুরো রিসোর্ট তখনও বাইরের দর্শনার্থীদের দখলে। দেশে করোনাভাইরাস বলে কিছুই নেই ফিলিংটা খারাপ ছিল না অবশ্য!!
সন্ধ্যায় ওদের ক্যাফেটেরিয়ায় অর্ডার করে ফুচকা খেয়েছিলাম। পলওয়েলের বাকি সবকিছুর মতই এভারেজের চেয়ে নিচে ছিল তার টেস্ট। রাত ৮টা পর্যন্ত পার্কের দর্শনার্থীদের হইচই শেষ হওয়া অব্দি রুমের বারান্দায় বসে রইলাম আমরা। এর মধ্যে ক্যাফেটেরিয়া থেকে ফোন এল রাতের খাবার কি খাব জানিয়ে দিতে। দুপুরের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে কোনরকমের বাঁশ না খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। পাবদা মাছের ঝোল, আরেকটা কি মাছ ভুনা, ডাল আর ভাত ব্যাস।
তারপর একটু হেঁটে বেড়ালাম শান্ত রিসোর্টে। ভীষণ বাতাসে লেকের কচুরিপানা ভেসে যাচ্ছে, বিদ্যুৎ চমকে উঠছে দূরের আকাশে, বৃষ্টি আসবে আসবে করছে। এই সময়টা খুব চমৎকার ছিল। ব্রিজের ওপাশে গেলাম হেঁটে। দিনে কাজ চলছিল বলে ওপারে যেতে পারিনি। চমৎকার লাগে রাতের বেলাটা। ব্রিজটা বাতাসে দোলে। ফিশিং পিয়ারে দাঁড়িয়ে রাতের আকাশ দেখতে অসম্ভব সুন্দর লাগে। ব্রিজের অন্যপাশে কিছু বেঞ্চ আছে বসে পানির ছলাত ছলাত আর বাতাসের শব্দ শোনার জন্য। বিখ্যাত লাভ লকের পয়েন্টটাও ওখানে। জায়গাটা যাওয়ার আগে যত বড় ভেবে গিয়েছিলাম তার অর্ধেকও না আসলে।
তবে সারাদিনের বিরক্তি খানিকটা কমেছিল রাতের শান্ত পরিবেশ পেয়ে। রাতের বারান্দায় খানিকক্ষণ বসে থেকে রুমে এসে শুয়ে পড়ি পরদিন ভোরে বাইরের লোক ঢোকার আগে একবার পুরো জায়গাটা ঘুরে দেখার জন্য।
পরদিন খুব ভোরে উঠে বেশ ভালো লেগেছে জায়গাটা। সবাই ঢুকে মাছবাজার বানাবার আগেই আমরা ছবি তুলে নিই এখানে সেখানে। ছবি যা তুলতে পেরেছি সব এই সময়টাতেই তোলা আসলে। একটু সুইমিং করতে নেমেছিলাম ব্রেকফাস্টের আগে! যেকোন রিসোর্টে পুলে বেশ অনেকক্ষণ সময় কাটাই আমরা কিন্তু এখানে আগের দিন বাইরের লোকের ভিড়ে নামাই হয়নি। পুলের অভিজ্ঞতা আরও খারাপ। ওখানের স্টাফ নিজের মনে গান শুনতে ব্যস্ত। কথার জবাব পাওয়া মুশকিল। পুরো রিসোর্ট জুড়ে ছ্যাঙ্গাজাতীয় কালো কালো পোকা ঘুরে বেড়াচ্ছিল। পুলের পানিতেও তারা মরে পড়ে আছে। কখনো পানি ক্লিন করা হয় বলে মনে হচ্ছিল না। নামার একটু পরেই গা চুলকানো শুরু হল আমাদের। মহাবিরক্ত হয়ে পুল ছেড়ে রুমে গিয়ে শাওয়ার নিয়ে ব্রেকফাস্ট করতে যাই আমরা।
গতকাল খাওয়া সেইম ব্রেকফাস্ট মেনু দিয়েই আরেকবার ব্রেকফাস্ট সারি আমরা। সাথে চা/ কফির অপশন আছে। খাওয়া শেষ হতে না হতেই একের পর এক বোট এসে ঘাটে ভিড়তে শুরু করে আর আমরাও জলদি করে রুমের দিকে চলে যাই। ততক্ষণে এই জায়গা থেকে কখন বের হব সেই অপেক্ষা শুরু হয়েছে। চেকআউট টাইমের আগেই ওদের কল করি রুম চেক করতে। এরপর বিল মিটিয়ে বেরিয়ে যাই রাঙামাটি বাজারে যাবার জন্য। ওখান থেকে বড়জোর ৫ মিনিট যাবার জন্যে ১০০ টাকা ভাড়া নেয় সিএনজি।
পলওয়েলে যাবার জন্য যতটা আগ্রহ ছিল, তার কোটিগুণ ডিসএপয়েন্টেড হয়ে বেরিয়েছি। কেউ যদি ওখানে যেতে চান, আমার মনে হয় রাতে থেকে ৬০০০-১০০০০ টাকা না ফেলে বরং রাঙামাটি ঘোরার জন্যে বোট ট্রিপের অংশ হিসেবে ৩০ টাকা খরচ করে ঘুরে আসতে পারেন। বোট প্যাকেজে ৫-৭ টা জায়গা ঘোরায় তার প্রতিটাতেই পওয়েল পার্ক ইনক্লুডেড। রুম ছাড়া পলওয়েলের বাকি সবকিছুতে access ওই টাকাতেই পেয়ে যাবেন।
দুসাই, প্যালেস বা গ্র্যান্ড সুলতান টাইপ রিসোর্ট এক্সপেরিয়েন্স এখানে আশা করলে ভুল করবেন। আমার মত হতাশ হতে হবে। এটা আসলে একটা পার্ক যেখানে রাতে থাকার ব্যবস্থা আছে!
আমি কি রেকমেন্ড করব?
-না। তবে আপনি পুলিশ হলে/ ফ্যামিলির কেউ পুলিশ থাকলে অনেক বড়সড় একটা ডিস্কাউন্ট পাবেন। তখন এক রাত থেকে আসতেই পারেন। আমার মত পুরো রেট খরচ করে এখানে থাকা বোকামিই হবে আমার মতে।
আমি কি আবার যাব?
-পাগল না মাথা খারাপ?
নেক্সট রাঙ্গামাটি গেলে বোট ট্রিপের পার্ট হিসেবে গিয়ে ঘুরে আসলেও আসতে পারি অবশ্য!! ওদের ফুড- খুবই এভারেজ। কোন বেলাই খুব আরাম করে খেতে পারিনি। দুজনের জন্য প্রতিবেলা খরচ হয়েছে ৬০০-৮০০ টাকার মত। ডিপেন্ড করছে কি অর্ডার করছেন তার উপর।
সার্ভিস-এভারেজ।
কিছু অর্ডার করতে গেলে আগে পে করতে হয়। রুম সার্ভিসে পানি অর্ডার করলেও প্রথমে বলে টাকা দেন
আমরা বাকি যেখানেই থেকেছি সব একসাথে চেকআউটের টাইমে পে করে অভ্যস্ত বলে একটু অবাক লাগছিল!
overall rating: 4/10
এখন আপনার ডিসিশন ওখানে যেয়ে থাকবেন কি থাকবেন না! আমার যাওয়ার আগে এই ইনফরমেশনগুলো জানলে আমি যেতাম না। তাই মনে হল ডিটেইলে লিখে ফেলি। You’re welcome
Disclaimer: একান্তই আমার ব্যক্তিগত মতামত। সবার এক্সপেকটেশন, রুচি, প্রেফারেন্স এক না বলে অন্যদের অভিজ্ঞতার সাথে নাও মিলতে পারে।