SAINTMARTIN I COXSBAZAR I BANDARBAN I BANGLADESH I 2024

Faisal Mahmud

SAINTMRTIN I COXSBAZAR I BANDARBAN I FAISAL MAHMUD I BANGLADESH I 2024

৮ দিনের কক্সবাজার , বান্দরবন , সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ 

তারিখঃ ৩ জানুয়ারি টু ১১ জানুয়ারি  ২০১৮। 

জীবনের উত্থান পতন থাকবেই

মানুষ হিসেবে সেটাকে উপভোগ করাই শ্রেয় । 

একটা সময় ছিলো বন্ধু ছাড়া লাইফ পসিবল নাহ, রক্তের টান ছাড়া এই যুগে কেউ বন্ধু হতে পারে নাহ । বন্ধু বলতে পরিবারের মানুষজন এর বাইরে যারা আসে যায় তারা আততায়ী হয়ে আসে । জীবন চলার পথে বহু বাধা এবং সার্কাজমের মধ্যে পরতে হয় । কেউ সেটাকে আচ করতে পারে কেউ সেটা পারে নাহ পারলেও আর কিছু করার থাকে নাহ । মানুষের ব্যক্তিত্য বলতে চুপ থাকা এবং কথা কম বলা । পক্ষে বিপক্ষে মন্তব্য করতে গেলে সেটা ভাইরাসের মত ছড়িয়ে পরে এবং উভয়ের ক্ষতি সাধন হয় ।

পাবলিক ভার্সিটি ছেড়ে ভর্তি হলাম বেসরকারী ভার্সিটিতে , জীবন তখন বাতাসের সাথে উড়তেছে । জীবনের টানিং পয়েন্টে বড় ভুলটা করে ফেলছি সেটা তখন উপলব্ধি হয়নি । ভর্তি হলাম বেসরকারী উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ে । আমার দুটা এ প্লাস থাকার কারনে আমি ১০০ পার্সেন্ট ওয়েবার পেয়ে যাই , ভর্তি হওয়ার কয়েকদিন পর আমার কাছে বিশাল একটা এমাউন্ট আসে যেটার ১০০ পার্সেন্ট ছিলো বাবাকে ঠকানো । অদূর ভবিষ্যত নিয়ে তখন কোন ভাবনা নেই , বর্তমান নিয়েও নেই । প্রথমে বলছিলাম জীবন তখন উড়তেছে কোন বাধা নেই জীবনে । 

বন্ধু সালেহকে ভর্তি করালাম উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ে । ও IELTS করতে ছিলো বিদেশ যাবে বলে । আমি ওরে বুঝানোর পর ও কেমন করে জানি রাজি হয়ে গেলো । ওর সাথে পরিচয়টা খুবই চমৎকার ছিলো যেটা অন্য কোনদিন প্রকাশ করবো । ওরে ভর্তি করানোর পর ওর কাছেও ভালো একটা এমাউন্ট জমা হয় । আমদের মাথায় তখন ঘুরতেছে আমরা কোথাও ঘুরতে যাবো । সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা সিলেট যাবো কিন্ত সে চিন্তা বেশিক্ষন স্থির হলো নাহ । আমাদের পরবর্তী গন্তব্য হিসেবে ঠিক হলো কক্সবাজার যাবো ।  যাওয়ার আগে বিশাল প্রস্তুতি জামা কাপড় কেনা কাটায় আমাদের ধুম পরে যায় । চট্রগ্রাম ট্রেনের তিনটা টিকিট কিনে নিয়ে আসি আমরা । 

মনের ভীতর উল্লাস তখন পাহাড় সমান উচু , নিজেকে সামলানো তখন খুবই কঠিন হয়ে পরলো।জীবন তখন নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী কবিতার মত

  আমি   আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ।

  আমি   হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল,

  আমি   চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’

  পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’

   ফিং দিয়া দিই তিন দোল;

২০১৬ সালের পরই আমি উড়তেছি , আমাকে কেউ আটকাতে পারছে নাহ । পরিবারের কাছে  পজিটিভ হিসিবে নিজেকে বারবার উপস্থাপন করে নিজেকে সেড়া জাহির করছি বারবার । 

৩ জানুয়ারী আমরা রওয়ানা দিলাম চট্রগ্রামের উদ্দেশ্যে , ট্রেনে ভরপুর মানুষ । দুজন মহিলা উঠলো আমাদের সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলো । আমাকে বললো বাবা আমাকে একটু বসতে দিবা আমি নরসিংদী গিয়ে নেমে যাবো । দয়া দেখিয়ে আমি তাদের বসতে দেই  কিন্তু তারা সেটাকে নিজেদের সিট হিসেবে নিয়ে নিলো অনেকবার বলার পরও তারা উঠতে ছিলো নাহ ।ট্যুরে যাওয়ার আগের দিন খুব প্রেশানিতে ছিলাম শরীরটা তেমন ভালো ছিলো নাহ । তার উপর শীত চরমে , তাদের বারবার বলার পরও তারা উঠতে ছিলো নাহ । একটা টাইমে এসে তাদের কে জোর করে উঠিয়ে দিছি । সে আমাকে বলছে বাবা আমাকে ১০ মিনিটের জন্য বসতে দাও কিন্তু সে ২ ঘন্টায়ও চেয়ার ছাড়লো নাহ ।  দীর্ঘদিন পর কক্সবাজার যাচ্ছি মনের মধ্যে আলাদা একটা আমেজ কাজ করতেছিলো । ট্রেনের এই বগি থেকে সেই বগিতে ছুটে চলা , রং চায়ের আড্ডা বসানো , নানাবিধ কথাবার্তা নিজেদের মধ্যে শেয়ার করা সবকিছু মিলিয়ে জমজমাট বন্ধুত্ব । 

রাত ১১ টার কিছু পর ট্রেন এসে পৌছালো চট্রগ্রামে (সময়টা ভালো মনে নেই ) ট্রেন থেকে নেমে আমরা কক্সবাজার মুখি বাসে উঠে পরলাম তখন রাত বেযে ২ টা । হানিফ পরিবহনে উঠলাম , খুব সকাল সকাল আমরা কক্সবাজার পৌছে যাই । আমর হোটেল সি আলিফে রুম নিলাম । 

জীবনের সংকীর্নতা বলতে তখন কিছুই ছিলো নাহ , প্রফুল্ল সতেজ জীবন তখন । বাধভাঙ্গা উল্লাসে মেতে থাকি সারাক্ষন । জীবনের রং তখন উল্লাস , আত্মংকারে ছারখার হয়ে যাচ্ছে সবকিছু । 

প্রথম দিনঃ 

হোটেল থেকে ফ্রেশ হয়ে আমরা গেলাম বিচে ,DSLR ক্যামেরা দামীয় মোবাইল , একই রকম প্যান্ট সবকিছু মিলিয়ে একদম রমরমা একটা অবস্থা । বিচে অনেক্ষন হাটাহাটি করলাম তারপর সকালের নাস্তা করার জন্য আবার হোটেলে ফিরে আসলাম । সকালের নাস্তা করে একটু ফ্রেশ হয়ে নিলাম । সবাই রুমে গিয়ে হালকা পাতলা ঘুম কেউ আবার বাটন ফোনে প্রেমিকার সাথে কথা বলছে কেউবা শুয়ে আছে  এভাবেই চলতে থাকলো দুপুর পর্যন্ত ।জানুয়ারী মাসের শীত শরীরের পশমে পশমে শীত । প্রথম দিন সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা আজ গোসল করবো নাহ ।  দুপুরের খাবার খেয়ে আমরা বের হই বিচের দিকে , সুগন্ধা থেকে কাকলী পয়েন্ট হেটে হেটে গেলাম । কথা বলছি নিজেদের বন্ধুত্ব আজীবন অটুট থাকবে এ নিয়ে কত কথা । ছবি তুলছি মানুষের জীবন দেখছি । হাসি তামাশা করেই কেটে গেলো দুপুর । বিকাল বেলা গিয়ে আমরা হাটলাম চেয়ারে বসলাম গল্প করলাম । উপভোগের চেয়ে আমাদের ছবি তোলা তখন চরম পর্যায়ে চলে গেছি । যেখানে দাড়াই যেখানে বসি সেখানেই ছবি আর ছবি । সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো  সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢুবে ঢুবে অবস্থা । সবাই ছবি তোলায় ব্যস্ত আমরাও ছবি তোলায় নিজেদের নিয়োজিত রাখলাম । সন্ধ্যা নেমে আসলো কক্সবাজার শহর জুড়ে কিন্তু জমজমাট দিনের চেয়েও রাতে বেশি ।আমরা রাতে বের হলাম সাগরের সুর শোনার জন্য । এই একটা সুর ১৬ এবং ১৭ সালে আমাকে তার প্রেমের বন্ধনে আবদ্ধ করে রেখেছে । রাতে বিচে মানুষ কম থাকে , যারা থাকে তারা সমুদ্রের গর্জন উপভোগ করার জন্য সেখানে যায় । রাত ৯ কি ১০ টায় আমরা হোটেলে ফিরলাম , রাতের খাওয়া দাওয়া করার জন্য আমরা আবার বের হলাম । রাতের খাওয়া দাওয়া করে কিছুক্ষন গল্প করে আমরা ঘুমিয়ে গেলাম। 

আপনি নিজেকে কতটুকু উপভোগ করতে পারেন সেটা আপনার ব্যক্তিত্ব বহন করে , মানুষ দেখানো উপভোগ কখনো সত্য আকাড়ে প্রকাশ পায় নাহ , এখানে কথার মাঝেই গড়মিল থেকে যায় । বন্ধুত্বের রঙ তখনই উপলব্ধি করা যায় যখন নিজেদের কথা বাহিরে প্রকাশ পায় । এককথায় দ্বিমুখী নীতি অবলম্বব ।

সেকেন্ড ডেঃ

আমরা খুব সকালে উঠে চলে যাই ইনানী সমুদ্র সৈকতে , ইনানী আমার কাছে সবসময় ভালো লাগে। সৌন্দর্য এখানে প্রতিয়মান। আমরা ইনানী তে প্রায় ১ ঘন্টা ছিলাম। আমাদের এই সফরটা ছবি তুলায় বেশি গেছে , অনুভবের চেয়ে আমরা সেটাকে আর্টফিশিয়াল বানিয়ে ফেলছি । ইনানী থেকে আমাদের গন্তব্য হিমছড়ি , হিমছড়ি যে পাহাড়ে যাওয়া নিষেধ আমর সেখান পর্যন্ত গেলাম। হিমছড়ি আমাদের মনের গভীরে একটু জায়গা করে নিলো । হিমছড়ির সৌন্দর্য আসল সৌন্দর্য পেতে গেলে আপনাকে পাহাড়ের ভিতর যেতে হবে । ওখানে সোজা খাড়া একটা পাহাড় আছে ওটা বেয়ে উপরে উঠলে মনের মধ্যে আলাদা এক আমেজ তৈরি করে । 

আমরা জায়গা গুলো উপভোগের চেয়ে ছবি তুলেছি বেশি । মানুষকে জানানো বা দেখানোর একটা ট্রেন্ড তখন মনের ভিতর বাজতেছিলো । জীবন তো একরকম থাকে নাহ  । সময়ের তালে জীবনের অনেক কিছু পরিবর্তন হয় । 

হিমছড়ি থেকে আমরা ফিরলাম হোটেলে , ওরাদুজন গোসলের জন্য বের হয়ে গেলো আমিও সাথে সাথে গেলাম । ১৬/১৭ সাল টানা দুবছর এখনে এসেছি উপলব্ধি করেছি গোসল করেছি । এবার আমার মন টানতেছে নাহ গোসলের জন্য , লবনাক্ত পানিতে গোসল করলে আমার মাথা ভার হয়ে থাকে । প্রায় ২ ঘন্টা ওরা গোসল করে টায়ার ভাড়া করে নেয় , আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওদের ছবি তুলতে থাকলাম । তারপর আমারা রুমে ফিরে আসলাম , আমি রুমে গোসল করে নিলাম । দুপুরের খাওয়ারজন্য বের হয়ে গেলাম ।  দুপুরের খাবার খেয়ে আমরা একটু রেস্ট নিলাম । বিকাল বেলা আমরা কক্সবাজার শহরটা দেখতে বের হলাম । বড় বাজার গেলাম সেখান থেকে আচার হাবিজাবি কিনলাম।এই সাইডে অনেক রাখাইন এবং বৌদ্ধ বসবাস করে ক, বেশিরভাগ দোকানই তাদের ।  শহর থেকে ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায় । আমরা হোটেলে ফিরলাম । এরপর আজব কিছু ঘটনা ঘটে যেটা অবস্থা বিবেচনা করে শেয়ার করা থেকে বিরত রইলাম। রাতের খাবার খেয়ে আমরা সবাই বিচে গেলাম । মধু হই হই গানের সুর বাজতেছে ছোট ছোট বাচ্চাদের মুখে । আমরা তিনটা চেয়ার ভাড়া করে অনেক রাত পর্যন্ত সেখানে কাটালাম । 

তৃতীয় দিনঃ

দ্বিতীয় দিন অনেক রাত জেগে থাকার কারনে আমাদের শরীর আর চাচ্ছিলো নাহ ঘুম থেকে উঠতে , ঘুমিয়েঘুমিয়ে তো আর সব উপভোগ করা যায় নাহ । এবার সিদ্ধান্ত নিলাম আমারা রামু যাবো । আমাদের গন্তব্য রামু বৌদ্ধ মন্দির । রামুতে প্রচুর পরিমান বৌদ্ধ বিহার আছে , এই রামুতেই একসময় হামলা করে অনেক ক্ষতিসাধন করেছিলো উত্তেজিত জনতা । শহর থেকে অটো রিজার্ভ করে আমরা চলে গেলাম রামুতে , যাওয়ার পথের রোডটা অতটা ভালো ছিলো নাহ । আমরা গিয়েছিলাম মিঠাছড়ির পাহাড়চূড়ায় অবস্থিত ১০০ ফুট দীর্ঘ গৌতম বুদ্ধের সিংহ শয্যা মূর্তি দেখতে । এটা এশিয়ার সবচেয়ে বড় মূর্তি । এছাড়াও আমরা আরো কয়েকটা মন্দির দেখলাম , বৌদ্ধ ভিক্ষুদের থাকার ঘর গুলোর কারুকার্য যে কারো মনে গেথে থাকবে ।আমরা এখানে অনেক সময় ব্যায় করে কক্সবাজার শহরে ফিরি । 

আত্মার খাদ্য হিলো আত্মউপলব্ধি , জীবনকে সাজানোর দায়িত্ব আপনার আমার নিজের , এখানে  কিছু মানুষ আসবে ভালো কিছু আসবে খারাপ কিছু আসবে ভালো মন্দের মাঝামাঝি। 

শহরে এসে আমরা আবার ছুটলাম বিচের দিকে এবং সিদ্ধান্ত নিলাম আগামিকাল আমরা সেন্ট মার্টিন যাচ্ছি । আমরা এজেন্সির মাধ্যমে সেন্ট মার্টিনের টিকেট কাটি । বিচে অনেক্ষন ঘুরাফিরার পর আমরা রুমে এসে ব্যাগ জামা কাপড় যা আছে সব গুছিয়ে রাখলাম । কারন পরের দিন খুব সকালে আমাদের উঠতে হবে । রাতে ঘুমিয়ে গেলাম । ঘুরতে সবার ভালো লাগে কিন্তু আত্মার জন্য ঘুরতে কজন বা যায় । 

চতুর্থ দিন 

 সকাল বেলা এজেন্সির বাস চলে আসলো । আমরা হোটেলকে বিদায় জানিয়ে বাসে উঠলাম। এজেন্সির মাধ্যমে টিকিট কাটা যে লস প্রজেক্ট সেটা আমি পরে বুঝলাম । এর আগে একবার আমি সেন্ট মার্টিন গিয়েছি তখন আমরা টেকনাফ ঘাট থেকে টিকিট কেটে নিয়েছিলাম। বাসে নানাবিধ মানুষের সাথে পরিচয় , আমাদেরকে সকালের নাস্তা দেওয়া হলো বাসে । রাতে ঘুম ভালো না হওয়ার কারনে আমি বাসে ঘুমিয়ে যাই । মনে হলো এই কিছুক্ষন আগে বাস ছাড়লো আর এক পলকেই বাস চলে আসলো টেকনাফ ঘাটে । 

আমাদের সবার হাতে টিকিট , এবং আমরা কোন জাহাজে যাবো সেটা টিকিটে লেখা ।মোটামুটি মানের এক জাহাজে আমরা গেলাম । ঘাট থেকে জাহাজ ছাড়লো আমরা নিচ তলায় বসার সু্যোগ পেলাম । পরিযায়ী পাখির ঝাক উড়তেছে চারিদিকে , মানুষ তাদের বতাম চিপস এগুলো দিচ্ছে  আবার কারো হাত থেকে এসে নিচ্ছে পাখির বড় ঠোট ।টিকিপানচিল শৈলাবগা সহ আরো নানান পরিযায়ী  পাখির দল আমাদেরকে আকৃষ্ট করে তুললো। নাফ নদী পারি দিয়ে আমরা তখন  বঙ্গোপসাগরে , কিছু বড় বড় ঢৈউ আমাদের জাহাজের সাথে বারি খাচ্ছে , জাহাজ তখন নড়বড় হয়ে উঠে । সাগর পাড়ি দিয়ে  আমরাএখন সেন্ট মার্টিনের কাছাকছি । পিছনে সারিবদ্ধ আরো কয়েকটা জাহাজ আসতেছে । আমরা জেটিঘাটে নেমে হাটা শুরু করলাম , ভিতর সাইটে আমরা একটা হোটেল নিলাম , মান ততটা ভালো নাহ কিন্তু ব্যাচেলরদের জন্য পারফেক্ট একটা জায়গা । শীতের সময় ভ্রমনের মজাটা আলাদা । সেন্ট মার্টির এর আগেও একবার আসছি তখন আমাদের হাতে সময় খুবই কম ছিলো । সেন্ট মার্টীনের সৌন্দর্য সবাইকে তাক লাগিয়েদিবে । গাছপালা, পাখপাখালি, প্রবাল, শৈবাল, শামুক-ঝিনুক, মাছ; সেই সঙ্গে সবুজ ও নীলচে টলটলে জলরাশি এবং দ্বীপে আছড়ে পড়া ঢেউয়ের শব্দ সহজেই মানুষের হৃদয় জয় করে নেয়। সেন্ট মার্টিনে খাবারের দাম অনেক বেশি । আমরা প্রথম দিন দুপুরের খাবার খেয়ে তিনটা সাইকেল ভাড়া করে আমরা প্রথম দিনই ছেড়া দ্বীপের উদ্দেশ্যে বের হলাম যেটা বাংলাদেশের দক্ষিণ তম বিন্দু । জোয়ারের সময় ট্রলার স্পিড বোড ছাড়া যাওয়ার উপায় নাই । আমরা চিন্তা করলাম জোয়ারের পানি যদি হাটু সমানও হয় তাও আমরা সাইকেল নিয়ে সেন্ট মার্টিন যাবো । অতিরিক্ত বালু থাকার কারনে মাঝেমধ্যে সাইকেল চালানো খুবই কষ্টের । সবুজ নীল পাইর সাথে পানির ধাক্কায় ক্ষয়ে যাওয়া পাথরে সুন্দর রুপ ধারন করে আছে । আমরা কিছুক্ষন পরপর সাইকেল থামিয়ে কথা বলছি আড্ডা দিচ্ছি । এভাবে করতে করতে আছরের দিকে আমরা ছেড়া দ্বীপ যাই । সাইকেল চালিয়ে যাওয়া খুবই কষ্টকর ছিলো কিন্তু মনের মাঝে আলাদা এক আমেজ ছিলো । আমরা ছেড়া দ্বীপে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করি । সবুজ নীল জলরাশির সাথে কেওড়া গাছ সহ বিভিন্ন গাছ পরিবেশটাকে আরো সুন্দর করে তুলছে , কিছু জিনিস যা বলে বা শুনে উপলব্ধি করা যায় নাহ এটাকা দেখে মনের সুখ নিতে হয় । সেন্ট মার্টির আমার কাছে আজীবন সুখের ছায়া হয়ে থাকবে । এবার ফেরার পালা আমাদের সাথে আরো ৩/৪ জন ছিলো । ছেড়াদ্বীপ পাড়ি দিয়ে যখন আমরা সেন্ট মার্টীনের উচু অংশে পৌছাই তখন  সন্ধ্যা নেমে গেছে । অন্ধকারে মোবাইল জ্বালিয়ে আমরা এগোতে থাকলাম । সন্ধ্যার কিছুক্ষন পর এসে আমরা দোকানে সাইকেল জমা দিলাম । তারপর চলে গেলাম হোটেল , ফ্রেশ হয়ে আমরা চলে আসলাম বিচে । তখন রাত ৭/৮ বাজে । সাগরের গর্জন আমাকে ভালোবেসে ফেলেছে বা আমি তাকে ভালোবেসে ফেলেছি ।  

আমি প্রফুল্ল থাকলে চাই , আমি হাসি খুজি ভ্রমণে । ভ্রমণ কখনো আমাকে কাদায় নাহ । ভ্রমন আমার কাছে অমীয় সুধার মত । বাহ্যিক দৃষ্টিতে আমি কেমন সেটা আমি নিজেও জানি নাহ তবে ভ্রমণ আমাকে আত্মতুষ্টি দেয় নিয়মিত । 

সাগর পাড়ে গিয়ে আমরা ৩ চেয়ার ভাড়া করে নিলাম , সবাই মনের সুখ দুঃখ নিয়ে আলাপ আলোচনা করতে থাকলাম । এর মধ্যে খুব বাতাস বইতে ছিলো , বাতাস হলেই বালু ঝড় শুরু হয়ে যায় । আমরা বিচ থেকে ফিরে এলাম একটু ভিতরে । এসে রাতের খাবার খেয়ে নিলাম । এরপর রুমে ফিরে গেলাম ।  

পঞ্চম দিন 

খুব সকালে উঠে আমরা সেন্ট মার্টিনের চারদিক দেখা শুরু করলাম । যখন সেন্ট মার্টিন ঘাটে নামি তখন ভ্যান গুলো ভাড়া চেয়েছিলো ২০০/৩০০ করে । কিন্তু আমরা হেটে জেটি ঘাট থেকে মূল পয়েন্টে আসতে ২০ মিনিট সময়ও লাগে নি । দুপুরের আগে আমরা রুমে ফিরে গেলাম । ওরা দুজন গোসলের প্রস্ততি নিয়ে আসলো , ঘন্টাখানের ওরা সেখান গোসল করলো । আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবকিছু উপভোগ করতে ছিলাম । মাঝে মধ্যে পা দুটো পানিতে ভিজিয়ে নিলাম।

আমি আমাকে ভাবি আমার মত করে , কে কি ভাবলো তা নিয়ে আমার কিছু যায় আসে নাহ । নিন্দুক থাকবেই নিন্দুক না থাকলে একপাক্ষিক জীবন সুন্দর হতো নাহ । তখন নিজেই নিজের কাছে খারাপ লাগতো । 

গোসল শেষে আমরা হোটেলে ফিরে যাই , এবার ফেরার পালা । ব্যাগ  গুছিয়ে আমরা জেটি ঘাটে চলে আসলাম। আগে আসার কারন হলো সিট পাওয়া । আমরা সবাই জাহাজে উঠে গেলাম। 

জাহাজ সময়মত ছাড়লো । সবগুলো জাহাজ এক পথ দিয়ে গেলেও আমাদের জাহাজ আড়াআড়ি যাওয়া শুরু করলো। কিছুক্ষন পর হঠাত বাতাসের দিক পরবির্তন করলো । সাগর জ্ব্লে উঠলো তার নিজে চরিত্রে । আমরা ছিলাম নিচ তলায় । ঢৈউ গুলো সব আছড়ে পরছে আমাদের জাহাজের উপর । মহিলাদের কান্নাকাটি শুরু হয়ে গেলো । সাগর কখনো ঠান্ডা আবার কখনো তার নিজ শক্তিতে জ্বল্ব উঠে । হঠাত করে জাহাজের লোকজন হ্যান্ড মাইকে ঘোষনা দিলো সবাই আল্লাহ আল্লাহ করেন । এই এনাউন্স শুনে মানুষ আরো ভীত হয়ে গেলো । মহিলাদের কান্নাকাটির শব্দে জাহাজ ভাড়ি হয়ে গেলো । জাহাজ কাত হায়ে যাচ্ছে বারবার , একপাশ কাত হলে আরকে পাশে দেখা যায় বিশাল ঢৈউ । আমার পাশে বসা ছিলাও এক অপরিচত লোক সে সবার কছে মাফ চেয়ে নিলো । জাহাজের সবাই মোটামুটি ভয় পেয়ে গেলো । আমি অনেক সাহস নিয়ে বলছিলাম এটা তেমন কিছু নাহ কিন্ত একটা পর্যায় এসে আমিও কিচুটা ভয় পেয়ে যাই । ৪০/৪৫ মিনিট পর সবকিছু  স্বাভাবিক হলো । জীবনের রং খুজতে বলি আমি এটাই হলো জীবনের রং । 

সাগর ছেড়ে এবার আমরা নাফ নদীতে , পরিবেশ অনেকটা ঠান্ডা । মানুষজনের মন থেকে ভীত হওয়ার ব্যাপারটা চলে গেছে । কিছু মানুষ আমার মনে হয় নাহ আর সেন্ট মার্টিন আসবে । আমরা টেকনাফ এসে পৌছালাম । গাড়ির ড্রাইভারকে কল দিয়ে আমরা বাসে উঠে বসলাম । 

বাসে আমরা সবার পিছনের সিটে জায়গা পাই । নতুন আরেক ভূত চাপলো আমাদের মাথায় । কিছু জিনিস প্রকাশ করা যায় নাহ মানুষ বোকা অথবা অসভ্য ভাববে ।

সুন্দর চিন্তা ধারার উদয় তখনই হয় যখন বান্ধু বান্ধব পজিটিভ মাইন্ডের হয় এবং একই ক্লাসের হয় । ক্লাস বলতে একটা ধরন বুঝিয়েছি । সৎ পথে থাকলে মানুষের মন কখনো নেগেটিভ কিছু নিয়ে ভাববে নাহ । 

ছয় দিনঃ

আমরা কক্সবাজার এসে পৌছালাম , নতুন করে আরেকটা হোটেলে উঠলাম , কি কারনে উঠলাম সেটা অজানা থাকা । সব জানিয়ে দিলে নিজের মধ্যে তো আর কিছু থাকবে নাহ । আমরা বিকাল পর্যন্ত সেখা অবস্থান করলাম । মনের মাঝে তখন উথাল পাতাল ঢৈউ , কি করতেছি বা কি হচ্ছে সেদিকে আমাদের কোন নজর নাই । আমরা যে কারনে ছিলাম সেটার সাকসেস হয়েছে ৫০ পার্সেন্ট । এবং সেটা সালেহ করছে । 

ওদিন বিকাল বেলা আমরা রওয়ানা দিলাম বান্দরবানের উদ্দেশ্যে , বান্দরবানে গিয়ে আমরা হোটেল হিলটনে উঠলাম । ২০১৬ সালেও আমি এই হোটেলে উঠছিলাম । 

জুন জুলাই মাসে এই রোদ এই বৃষ্টি থাকে, মানুষের জীবন হলো জুন জুলাই মাস । জীবনের পা না পাওয়ার বেদনা অনেক , এইসব বেদনার রং ধূসর । 

সপ্তম দিনঃ

হোটেল থেকে সকালে বের হই , নাস্তা করে যাওয়ার সময় দেখি মাওলানা দেলোওয়ার হোসেন সাইদীর সুযোগ্য সন্তার শামীম সাইদী ।তিনি নিজেই আমাদের অফার করলো চলো আমার সাথে ঘুরে আসি ।  আমরা আর না বললাম নাহ , এমনকি কোন ভয়ও কাজ করতেছিলো নাহ আমাদের। জীবন একটাই এখানে রং খুজতে হয় । আমি সেই রং প্রায় খুজে পাই নানা মানুষ , শহর এবং মফস্বলে । আমরা তার সাথে নীলগিরি ,নীলাচল, চিম্বুক পাহাড় এসব ঘুরি ।তিনি পারসোনাল গাড়িতে করে আমাদের নিয়ে গেছেন , সে সময়টা ছিলো খুবই আনন্দের । কিছু আনন্দ বলে প্রকাশ করা যায় নাহ । 

নীলগিরি নীলাচল চিম্বুক নিয়ে আমি আগেই বিস্তারিত দিছি বান্দরবান কক্সবাজার ভ্রমনে । যেটা আমার জীবনে প্রথম ছিলো । 

ঢাকা ফেরা এত জার্নির পর আর মন চাচ্ছিলো নাহ কোথাও থাকি । বান্দরবান থেকে সোজা চলে আসি চট্রগ্রাম সেখানে থেকে ট্রেনের মসজিদে ১৫/১৮ জনের মত লোক কোনভাবে বসে আসছি ।

জীবন চলার পথে অনেকে আসবে অনেকে যাবে , জীবন এটাই । এখানে ছাড় দিতে হবে কঠোর হতে হবে , সময় বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হবে । বাস্তব জীবন কল্পনার সাথে মিলিত করা যাবে নাহ ।

৮ দিনের দিন সকাল বেলা আমরা ঢাকা এসে পৌছাই ।