September Rain
TEKNAF I INANI I LABONI I SUGANDHA I COXSBAZAR I SEPTEMBER RAIN I BANGLADESH I 2024
টেকনাফ থেকে কক্সবাজার পুরো সৈকত হাঁটার গল্প
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত। যার দৈর্ঘ্য প্রায় প্রায় ১২০ কিলোমিটার। আমরা যারা কক্সবাজার ঘুরতে যাই তারা নরমালি হাতে গোনা কয়েকটি স্পট/পয়েন্ট ঘুরি। যেমন লাবনী, কলাতলী, সুগন্ধ্যা, ইনানী এসব। কেউ বেশি আগ্রহী হলে আরো এগিয়ে পাটুয়ারটেক, শ্যামলাপুর, সাবরাং, শাহপরীর দীপ ও যায়। কিংবা কোনো বাহনে চড়ে মেরিন ড্রাইভ ধরে শেষ পর্যন্ত ও ভ্রমন করে ওনেকেই।
কিন্তু খুব অল্প সংখ্যক লোক এর ই মনে হয়, কেমন হত যদি পুরাটা হাটা যেতো? এই ট্রিপ টা করার ইচ্ছে ওনেক দিন ধরেই ছিলো। নানান কারনে হচ্ছিলো না। অবশেষ এ হলো আলহামদুলিল্লাহ। এবারের ২১ তম বীচ হাইকিং এ আমরা ২৬ জন টেকনাফ থেকে পায়ে হেটে ৪ দিনে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত পাড়ি দিয়ে কক্সবাজার আসি। মাঝের ৩ রাত বীচের পাশে ক্যাম্পিং করি।
পূর্নিমা তে সমুদ্র সুন্দর।আর সমুদ্রের পাশে ক্যাম্পিং জিনিশ টা আরো বেশি সুন্দর। আর প্রতিরাতে সমুদ্রের গর্জন এর সাউন্ড শুনতে শুনতে ঘুমানোর ব্যাপার টা বোনাস। সাথে ছিলো খাবার হিসেবে প্রতি বেলায় সামুদ্রিক তাজা মাছ।হাটার সময় ক্ষেত থেকে কিনে তরমুজ খাওয়া, কিংবা পাহড়ি কলা, লোকাল বাজারে গিয়ে আড্ডা দেওয়া, গুড়ের জিলাপি, জেলেদের কাছ থেকে সদ্য ধৃত মাছ ভেজে খাওয়া, ক্যাম্প ফায়ার করে ট্রিপমেট দের সাথে আড্ডা, লোকাল মানুষ দের কথা প্রসঙ্গে আমাদের হাটা সম্পর্কে বলার পর অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকানো সব ই এখন শুধুই স্মৃতি
ট্রিপ প্ল্যান:
দিন ১: যে যার মত করে দেশের ভিন্ন ভিন্ন জেলা থেকে এসে ভোর এ টেকনাফ পৌছাই। ফ্রেশ হয়ে নাস্তা খেয়ে অটোতে করে টেকনাফ শহর হতে স্টার্টিং পয়েন্ট এ পৌছাই। অত:পর গ্রুপ ছবি তুলি, হাটা শুরু করি বীচ ধরে। আয়োজক রা সবার হাতে একটি করে ব্যাগ ধরিয়ে দেয় এই মর্মে যে, যে ব্যাক্তি সবচেয়ে বেশি প্লাস্টিকের বোতল বীচ থেকে কুড়াতে পারবে তার জন্য পুরষ্কার আছে। যাই হোক প্লাস্টিক কুড়োতে কুড়োতে আর গল্প করতে করতে প্রথম দিনের ক্যাম্প সাইট নোয়াখালী পাড়া, বাহারছড়া এর উদ্দেশ্যে রওনা দেই।
প্রথমদিন বাকি দিনের চেয়ে তুলনামূলক কম হাটা ছিলো। এর কারন ছিলো ২ টা। প্রথম কারন হলো সারা রাত জার্নি করে ওনেকেই টায়ার্ড থাকে। আর ২য় কারন হলো বিকেলে বাঘঘোনা গিরিপথ / বাঘঘোনা ঝর্না এক্সপ্লোর করা। শীতকাল হওয়ায় গিরিপথ এ পানি ছিলো না বাট মাশাল্লাহ মাথার ওপর ট্রেইল এর বিশাল বিশাল পাহাড় দেখে মনে হচ্ছিলো অন্য এক দুনিয়ায় চলে আসছি। সেই সাথে সারাদিন এর ক্লান্তি মুহুর্তের মধ্যে মনে হলো উধাও হয়ে গিয়েছে।
আর ফেরার পথে সন্ধ্যায় লোকাল বাজারে ঘুরাঘুরি আর রাতে ছিলো ট্রিপ মেট ২৬ জনের পরিচয় পর্ব। আমাদের ক্যাম্পসাইট এর পাশে একটা মসজিদ আর হাফেজি মাদ্রাসা ছিলো। ছোট ছোট বাচ্চা গুলা আমাদের কার্যকলাপ খুব অবাক দৃষ্টিতে দেখতেসিলো, আর সাথে নানান প্রশ্ন। ওদের সাথে আলাপচারিতার পর্ব বেশ উপভোগ্য ছিলো। এদিন খাবার ম্যানুতে ছিলো বড় চিংড়ি মাছ, কাছকি মাছ, ভাটা মাছ & শুটকি বর্তা ইত্যাদি।
দিন ২: সেকেন্ড দিন আমাদের ক্যাম্পসাইট ছিলো শ্যামলাপুর বীচ এর ঝাউবন। এ দিন সকাল ৬:৩০-৭:-৩০ এর মধ্যে সবাই তাবু ঘুছিয়ে রওনা হই। এত সকালে বের হবার অন্যতম কারন ছিলো সকাল সকাল যতটা পথ পারা যায় কাভার করা। প্রায় ১০/১১ কিলো পর আমাদের খবার দাবার এর জন্য নির্ধারিত পয়েন্ট ছিলো ভাবীর হোটেল / ছিয়াম ভাত ঘর। এটা হাজাম পাড়ায় অবস্থিত। ঝাউগাছ এ ঘেরা জায়গা টা সুন্দর। পাশেই একটা ক্যাম্পিং স্পট আছে যার নাম “বে ক্যাম্পিং এন্ড এডভেঞ্চার”।
খাবার দাবার শেষ করে হ্যামকে চিল করে চা খেতে খেতে রওনা হই শ্যামলাপুর এর উদ্দেশ্যে। আর পথে যেখানে সেখানে ম্যাট বিছিয়ে চিল করা, টুকটাক গল্প, এটা ওটা খাবার ত ছিলোই।যাই হোক সবাই ক্যাম্প সাইট এ পৌছে তাবু ঠিক করি। এরিমধ্যে ওনেকেই রেডি হয়ে ট্রলারে করে একটু গভীর সমুদ্রের দিকে যাই সমুদ্রে গোসল / লাফ দেওয়ার জন্য। বেশিরভাগ লোকজন লাইফ জ্যাকেট সহ লাফ দিলেও আমি সহ ৩/৪ জন লাইফ জ্যাকেট ছাড়াই হাতে দড়ি নিয়ে লাফ দেই একটু সমুদ্রের গভীরে যেতেই পানি সেই লেভেলের ঠান্ডা। আর পানি থেকে উঠতেই নাক দিয়ে অটো পানি বের হওয়া শুরু হইসিলো। আর রাতে বোনাস হিসেবে ছিলো গলা ব্যাথা।
শ্যামলাপুর বীচ এর রাস্তার উপজিটে দুটো বাজার আছে নামার বাজার, উপরের বাজার। উপরের বাজার বেশ বড়। সন্ধ্যার দিকে বাজার দুটোতে ঘুরে ফিরে বেশ কিছু লোকাল খাবার খেয়ে সময় কাটাই।
এদিনের খাবারে ছিলো সামুদ্রিক মুছ মাছ & বরা মাছ। রাতের খাবার শেষ এ ক্যাম্পফায়ার ত ছিলো ই। আর এর পর আমরা ওনেকেই সমুদ্রের পাড়ে ম্যাট বিছিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত আড্ডা দেই। আর মাথার ওপরে ছিলো চাঁদ মামা এ দিন ফুল মুন ছিলো
দিন ৩: এদিন আমাদের ক্যাম্পসাইট ছিলো ইনানী বীচ থেকে ২ কিলোমিটার সামনে। বরাবরের মত সকালের নাস্তা সেরে তাড়াতাড়ি বের হওয়ার চেষ্টা করি সবাই। পথে তরমুজ ক্ষেত থেকে তরমুজ কিনে খাওয়াটা বেশ এনজয় করি। দুপুরের বিরতি / জুমার নামাজের বিরতি ছিলো পাটুয়ার টেক এ।পাটুয়ারটেক যায়গা টা বেশ। শুক্রবার হওয়ার প্রচুর টুরিস্ট চোখে পড়ে এদিন। এদিন ক্যাম্প সাইট এ পৌছাতে পৌছাতে সন্ধ্যার পর হয়ে যায়। আর রাতে ক্যাম্পফায়ার পূর্নিমা রাতে বীচ এ হাটা, বসে আড্ডা দেওয়া ত ছিলোই
দিন ৪/ লাস্ট দিন: এদিন ও সবাই বেশ ভোর বেলা বের হবার চেষ্টা করি। কারন পথে কায়েকিং, প্যারাসেলিং এর মত এক্টিভিটি ছিলো। আর এদিনের যাত্রা বিরতি ছিলো হিমছড়ি। হিমছড়িতে যাত্রাবিরতি শেষ করে কলাতলী আসতে আসতে শেষ বিকেল। সেই সাথে সমাপ্ত হয় এই ট্রিপের।
সব মিলেয়ে দারুন একটা ট্রিপ ছিলো, আলহামদুলিল্লাহ। বিশেষ কৃতজ্ঞতা বিচ হাইকিং গ্রুপের Sohan Msuf ভাইয়ের প্রতি, এই আয়োজন এর জন্য